https://www.purusattom.com/
শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সংক্ষিপ্ত দিব্য জীবনী ।শুভ ভাদ্র মাসের শ্রদ্ধার্ঘ্য
- Get link
- X
- Other Apps
*শুভ ভাদ্র মাসের শ্রদ্ধার্ঘ্য *
শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সংক্ষিপ্ত দিব্য জীবনী ।।
****************************
(১ম পর্ব)
ভগবানের আবির্ভাব
নারী ও পুরুষ উভয়ের সংঘাতে যখন উভয়ে নিজ-নিজ বৈশিষ্ট্যে উদ্দাম ও অবাধ হয়, উভয়ের উভয়ের প্রতি আকর্ষণ যেখানে উভয়কে মূঢ় করিয়া না তুলিয়া উদ্বুদ্ধ হইয়া আদর্শে আপ্রাণ হইয়া ওঠে---তেমনতর প্রকৃতি ও পুরুষেই ভগবান মূর্ত্ত হইয়া আবির্ভূত হন, আর, জীব ও জগৎকে সংবৃদ্ধির পথে আকর্ষণ করিয়া অমৃতকে পরিবেশন করেন ! ১৮৪। (চলার সাথী)
যে প্রকৃতি ও পুরুষকে অবলম্বন করে বর্তমান পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আবির্ভূত হয়েছিলেন, এই ধরাধামে---সেই লীলা-কাহিনী বর্ণনা করার মত সাধ্য এবং সাধনা আমার নেই। তথাপি অপটু লেখনীতে বিধৃত করার চেষ্টা করলাম। লেখনীর ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরিয়ে দিলে সহৃদয় পাঠকদের কাছে চিরঋণী থাকব।
* * * * * *
*অবিভক্ত বাংলার পাবনা* শহরের কমবেশী তিন কি. মি. পশ্চিমে পদ্মার উত্তর তীরের জঙ্গলে পরিপূর্ণ জনবিরল গ্রামটির নাম হিমাইতপুর। ঊনিশ শতকের প্রথমদিকের ঘটনা। ওই গ্রামে কমলাকান্ত বাগচী নামে একজন নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ বাস করতেন। তাঁর সাথে বিবাহ হয় ঈশ্বরভক্তি পরায়ণা রমণী কৃপাময়ী দেবীর। তিনি নিজেকে শ্রীহরির পাদপদ্মে সমর্পণ করে সবসময় হরিনামে মেতে থাকতেন বলে গ্রামের সকলে শ্রদ্ধার সাথে ‘হরিবোলা বাগচী মা’ বলে তাঁকে সম্বোধন করতেন। ওই কৃপাময়ী দেবীর গর্ভে কেশব, উমাসুন্দরী, হরনাথ এবং কৃষ্ণসুন্দরী নামে চারজন সন্তান জন্মগ্রহণ করে।
ওই হিমাইতপুর গ্রামে কাশ্যপ গোত্রীয় চৌধুরী পরিবারের স্বনামধন্য পণ্ডিত রামেন্দ্রনারায়ণ ভাদুড়ী চৌধুরীর প্রথমা স্ত্রী নিঃসন্তান ছিলেন। কৃপাময়ী দেবী তাঁর কন্যা কৃষ্ণসুন্দরী দেবীর বিবাহ দেন রামেন্দ্রনারায়ণ ভাদুড়ী চৌধুরীর সাথে। কৃষ্ণসুন্দরী দেবীর গর্ভে রামেন্দ্রনারায়ণের তিন পুত্র সন্তান ও তিন কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তারমধ্যে রামেন্দ্রনারায়ণের জীবদ্দশায় প্রথম ও তৃতীয় পুত্র শৈশবেই মৃত্যুমুখে পতিত হয়। অপর চার সন্তান কন্যা নিস্তারিণী দেবী, মনোমোহিনী দেবী, গোবিন্দমণি দেবী এবং পুত্র যোগেন্দ্রনারায়ণ (ডাক নাম লোহা)। তারমধ্যে কৃষ্ণসুন্দরী দেবীর জীবিতাবস্থায় নিস্তারিণী দেবী চল্লিশ বছর বয়েসে এবং যোগেন্দ্রনারায়ণ (লোহা) ষোড়শ বছর বয়েসে পরলোকগমন করেন। রামেন্দ্রনারায়ণ বাংলা ১২৯০ সালে এবং কৃষ্ণসুন্দরীদেবী ১৩৩২ সালে পরলোক গমন করেন।
মনোমোহিনী দেবীর আবির্ভাব—১২৭৭ বঙ্গাব্দের ১৮ই জ্যৈষ্ঠ। বাল্যকালে একজন জ্যোতিষী মনোমোহিনী দেবীর হস্তরেখা বিচার করে বলেছিলেন, এই বালিকার অল্প বয়সে বিয়ে হবে এবং ইনি লোক-পালয়িত্রী হবেন। শৈশবকাল থেকেই দিদিমা কৃপাময়ী দেবীর প্রত্যক্ষ ইষ্টনিষ্ঠার প্রভাবে ভক্তি এবং পিতৃদেব রামেন্দ্রনারায়ণের কাছে লেখাপড়া শিখে তিনি সমস্ত বিষয়েই জ্ঞান অর্জন করেন।
তিনি পিতার কাছে আদর্শ মানুষ হবার গুণ জানতে চাইলে রামেন্দ্রনারায়ণ বলেছিলেন---
১। যারা সর্বদা সত্য কথা বলে।
২। পরের দ্রব্য যে কখনো চুরি করে না।
৩। যে গুরুজনের কথামত চলে।
৪। অন্য মানুষের প্রতি যে দরদী হয়।
৫। যে নরনারায়ণ সেবা করে।
৬। যে ঈশ্বরকে ভক্তি করে এবং ভালবাসে।
ওই গুণগুলো অর্জন করতে পারলে ঈশ্বর সুপ্রসন্ন হয়ে দীক্ষা দানও করেন।
মনোমোহিনী দেবী ওইসব গুণে গুণান্বিত ছিলেনই। তাই বাবার কথা শুনে দীক্ষা পাবার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠলে রামেন্দ্রনারায়ণ মেয়েকে বললেন---‘‘মা তুমি এক কাজ কর, রোজ ঠাকুর ঘরে গিয়ে দেবতার সামনে বসে মন্ত্র পাওয়ার জন্য প্রার্থনা কর, ঠাকুর অবশ্যই তোমার প্রার্থনা মঞ্জুর করে তোমাকে মন্ত্র বলে দেবেন।’’ (ক্রমশঃ)
*********************
*(২য় পর্ব)*
সরলপ্রাণা মনোমোহিনী দেবীর তখন আট বছর বয়স। পিতার কথা মেনে ছোটভাই লোহাকে সাথে নিয়ে ঠাকুর ঘরে বসে প্রার্থনা করতে শুরু করেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রার্থনায় গুরুর আসন টলে যায়। হঠাৎ আলোকিত হয় ঠাকুর ঘরটি। মনোমোহিনী দেবী স্পষ্ট দেখতে পান, সিংহাসনের পিতলের মূর্তির স্থানে বসে আছেন মাথায় টুপি, মুখে কাঁচা-পাকা দাড়ি, সুঠাম দেহের এক পুরুষ মূর্তি। মনোমোহিনী দেবীকে একটি মন্ত্র বলে দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। মন্ত্র লাভের আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান মনোমোহিনী দেবী। পিতার কাছে ঘটনাটি খুলে বললে, পিতা বলেন, ‘‘মা তুমি এখন থেকে ওই মন্ত্র জপ কর, আর ওই মূর্তি ধ্যান করতে থাক।’’
পিতার উপদেশ মেনে তিনি নিয়মিত জপ-ধ্যান করতে থাকেন।
................................................
নবকৃষ্ণ চৌধুরী নামে রামেন্দ্রনারায়ণের এক জ্ঞাতি প্রতিবেশী ছিল। তাঁর জামাতার নাম ঈশ্বরচন্দ্র চক্রবর্তী। পিতার নাম গোবিন্দ চন্দ্র চক্রবর্তী। ওরা বাস করতেন পাবনা জেলার মথুরা ডাকঘরের অধীন ধোপাদহ গ্রামে। তিনি কার্যোপলক্ষ্যে হিমাইতপুরে ডাঃ বসন্ত চৌধুরীর বাড়ীতে এসেছেন। মনোমোহিনী দেবীও কার্যকারণে সেখানে গিয়েছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র একজন সাধক পুরুষ ছিলেন। তিনি প্রতিদিন স্নান করে বাক্স থেকে কাপড়ে মোড়া একটি পট ও গ্রন্থ বের করে পুজোপাঠ করে আবার কাপড়ে মুড়ে বাক্সে রেখে দিতেন। মনোমোহিনী দেবীর মনে বিষয়টি সম্পর্কে জানার কৌতুহল জাগে। একদিন ঈশ্বরচন্দ্র পদ্মায় স্নান করতে গেলে মনোমোহিনী দেবী তার বাল্যসখী বিপদনাশিনীর সাহায্যে বাক্স খুলে পটমূর্তি দেখে বিস্ময় ও আনন্দে মূর্ছিত হয়ে পড়েন। ঈশ্বরচন্দ্র স্নান সেরে ফিরে এলে মনোমোহিনী দেবীর কাছে তাঁর দীক্ষা প্রাপ্তির ঘটনার বিবরণ শুনে বলেন, তুমি মা ভাগ্যবতী। স্বপ্নে যিনি তোমাকে মন্ত্র দিয়েছিলেন তিনি আগ্রা দয়ালবাগ সৎসঙ্গের বর্তমান গুরু, আমার গুরুদেব হুজুর মহারাজ।
ঈশ্বরচন্দ্রের সহযোগিতায় মনোমোহিনী দেবী তাঁর স্বপ্নের গুরুদেবকে পত্র লিখলে তিনি ‘সুশীলে’ সম্বোধনে পত্রের উত্তর দেন সাথে সাথে সাধন-ভজনের নিমিত্ত কিছু পুস্তকাদিও পাঠিয়ে দেন।
..........***********.............
*(৩য় পর্ব)*
নয় বছর বয়সে পাবনা জেলার অধীন চাটমোহর গোয়াখাড়া গ্রামের পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র চক্রবর্তীর পুত্র শিবচন্দ্র চক্রবর্তীর সাথে বিবাহ হয় মনোমোহিনী দেবীর। বিবাহের পর ঈশ্বরচন্দ্র চক্রবর্তী মহোদয়ের সাহায্যে ধ্যানযোগে প্রাপ্ত গুরুদেব হুজুর মহারাজ (রায় সালিগ্রাম সিংহ বাহাদুর) মহোদয়কে কলকাতায় দর্শন করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে দীক্ষা গ্রহণ করেন।
তারপর থেকে সময় সুযোগ পেলেই এলাহাবাদ, কাশী, আগ্রায় গিয়ে গুরুদেবের সাক্ষাত করতেন। মনোমোহিনী দেবী একবার গুরুর কাছে প্রার্থনা জানিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আশীর্বাদ করুন, যেন আপনার মত সন্তান লাভ করতে পারি।’’
উত্তরে তাঁর গুরুদেব বলেছিলেন, আমার মত কেন, আমার চেয়ে মহৎ সন্তান তোমার গর্ভে জন্মাবে। তার আলোয় পৃথিবী আলোকিত হবে।
* * * * * * *
বিবাহের চার বছর পরে, ১২৯০ বঙ্গাব্দে মনোমোহিনী দেবীর পিতা রামেন্দ্রনারায়ণ ঋণগ্রস্ত অবস্থায় ইহলোক ত্যাগ করেন। সুযোগ বুঝে শরিকরা কৃষ্ণসুন্দরী দেবীকে মিথ্যা মামলায় উচ্ছেদ করার চক্রান্ত করেন। বিষয়-সম্পত্তি, জমিদারী রক্ষা করতে একের পর এক মামলা করতে গিয়ে সংসারের কত্রী প্রজাদের প্রিয় কর্তামা,---কৃষ্ণসুন্দরী দেবী ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কোন উপায় না দেখে জামাতা শিবচন্দ্রের শরণাপন্ন হলে শিবচন্দ্র শাশুড়ি মায়ের সম্পত্তি রক্ষা করার উদ্দেশ্যে গুয়াখারার বাড়ী ছেড়ে সহধর্মিনী মনোমোহিনী দেবীকে নিয়ে হিমাইতপুর চলে আসতে বাধ্য হন। শিবচন্দ্রকে বেশিরভাগ সময় কোর্ট-কাছারির কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হতো। ফলে সংসারের অন্যান্য সব দায়িত্বভার, যেমন, রান্নাবান্না থেকে শুরু করে, গোরু-বাছুর, ক্ষেত-খামার, প্রজাদের ভালোমন্দ সবটাই দেখতে হতো মনোমোহিনী দেবীকে। এতকিছু করেও মা এবং স্বামীর সেবাযত্নতেও কোন ত্রুটি রাখতেন না।
* * * * * * *
(ক্রমশঃ)
- Get link
- X
- Other Apps
Comments