Prathan Acharya Deb Ashok Ranjan Chakrabarti Deoghar
|
Pujyapad Shree Shree Dada |
প্রাণপুরুষের "মহাপ্রয়াণ'
ঠাকুর শ্রী শ্রী অনুকুলচন্দ্র আশ্রমের প্রধান আচার্যদেব অশোক দা আর নেই। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সৎসঙ্গ হল শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের পৌত্র এবং মহান আধ্যাত্মিক নেতা পরম পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীশ্রী অশোক চক্রবর্তী, ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের উদ্দেশ্য, উক্তি এবং আদর্শকে দেশের ও দেশের বাইরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন। পিতা শ্রীশ্রী বড়োদার মৃত্যুর পর তিনি দেওঘরে সৎসঙ্গ আশ্রমের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন।
🌺 পূজ্যপাদ আচার্য দেব শ্রী দাদার 🌺
পিতা ও জন্মস্থান
পূজ্যপাদ শ্রী শ্রী দাদা শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুল চন্দ্রের জেষ্ঠ পুত্র অমরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ( যিনি 'শ্রীশ্রী বড়োদা' নামে পরিচিত ) ঘরে সন 1933-10-21 পাবনা জিলায় জন্মগ্রহণ করেন । অশোক দা তার পিতার মৃত্যুর পর দেওঘরে সৎসঙ্গের সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন।
সৎসঙ্গের তৃতীয় পুরুষ
পরমপূজ্যপাদ আচার্য্যদেব শ্রীশ্রীদাদা
পরমপূজ্যপাদ আচার্য্যদেব শ্রীশ্রীদাদা সৎসঙ্গের তৃতীয় পুরুষ তথা বর্তমানে প্রাণপুরুষ। শ্রীশ্রীদাদাকে কেন্দ্র করেই আজ সমগ্র বিশ্বে কোটি কোটি নর-নারী বাঁচা বাড়ার পথ খুৃঁজে পেয়েছেন এবং নিত্য পেয়ে চলেছেন। শ্রীশ্রীদাদার আশীর্বাদে আজকে সারাবিশ্বে দীক্ষা বন্যা বয়ে চলছে। হাজারো পথভ্রষ্ট মানুষ সঠিক পথে এসে চলছে। মৃতপ্রায় মানুষ শ্রীশ্রীদাদার অমিয় সুধায় পাচ্ছে বেঁচে থাকার শক্তির অনুপ্রেরণা। কত জগাইমাধাই মত অধম সঠিক পথে চলার অনুপ্রেরিত ভালোবাসা। যেন মনে হয় প্রেমিক ঠাকুর, প্রিয়পরম আজও দেওঘরে লীলা করে চলেছেন। প্রতিদিন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে সহস্র সহস্র মানুষ আচার্য্যদেব শ্রীশ্রীদাদার সঙ্গ করার জন্য ছুটে চলছে ভারতের দেওঘর আশ্রমে শ্রীশ্রীঠাকুরের অশেষ দয়ায়, শ্রীশ্রীদাদার আশীর্বাদে ও পূজনীয় বাবাইদার যুগোপযোগী নির্দেশে পূজনীয় অবিনদার নেতৃত্বে মাত্র একদিনে ১৬,০০০+ দীক্ষা দিয়েছেন ভারতের দূর্গাপুরে। যা পৃথিবী সৃষ্টির পর এক বিরল পরিসংখ্যান রেকর্ড। একি আনন্দ পরমানন্দ ঠাকুর চিরকাল পাচ্ছি আচার্য্য পরম্পরায়
তোমার সঙ্গ ও যুগউপযোগী নির্দেশনা। ধন্য তুমি হে!
পরমদয়ালের রাঙ্গা রাতুল চরণে কড়জোড়ে
প্রার্থনা করি, –পূজ্যপাদ আচার্য্যদেব শ্রীশ্রীদাদা আমাদের মাঝে অনন্তকাল চিরায়ু হয়ে চির অমর হয়ে বেঁচে থাকুন।
|
Pujyapad Shree Shree Dada 16-12-21, 9.40 |
পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর আমাদের অনাথ অসহায় রাখেন নি, এবার তিঁনি জীবন্ত আদর্শপিতা, অভিভাবক, পরিচালক আচাৰ্য্য পরম্পরা রেখেছেন। যাতে কেউ ধর্ম্মের বিকৃতি, বাণী ও নির্দেশনার অপব্যাখ্যা, ধর্ম্মব্যবসা করে মানুষের ক্ষতি করতে না পারে! আর তিনি জীয়ন্তই আছেন আচার্য্য-পরাম্পরায়, আমাদের প্রতিটি সত্তায়!
|
ঢরণ পাদুকা |
■ বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রিয়প্রাণনাথ (তৃতীয় পুরুষ) পরমপূজ্যপাদ আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদা(অশোক রঞ্জন চক্রবর্তী) জীবনদ্বীপ গত ১৬ই ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে নির্ব্বাপিত হয়।
৮৯ বৎসর বয়সে তাঁর মর্ত্তলীলার অবসান ঘটে।আগে কিছুই তেমন বোঝা যায়নি। সকলের সকল চেষ্টাকে নিষ্ফল ক’রে দিয়ে কালের বিধান জয়ী হয়। তিনি বেশকিছুদিন ধরে দুর্গাপুর মিশন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন । পূজনীয় টিঙ্কুদা দা ,পূজনীয় শুভ দা , অনেকেই ছিলেন দেওঘরে।এছাড়াও অন্যান্য অনেককে টেলিফোনযোগে দুর্গাপুরে চলে আসতে বলা হয়।দুপুর ১১টা হতে-না-হতেই এই মর্ম্মান্তিক দুঃসংবাদ পুরো বিশ্বে ঘরে-ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। শোকাকুল আবালবৃদ্ধ নরনারী দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হ’য়ে ডুকরে কাঁদতে-কাঁদতে ছুটে আসেন হাসপাতাল চত্বরে— যেখানে তাদের প্রাণের জীয়নকাঠি, ইহপরকালের মালিক, প্রাণপুরুষ, আচার্য , দুঃখ কষ্ট হারি যিনি পরমপ্রভু লৌকিকতঃ শেষ শয়ানে আসীন। শেষকৃত্যের জন্য রচিত বিশেষস্থানে (দুর্গাপুর শ্যামপুর মন্দিরে) প্রায় দুপুর ৩টা নাগাদ হাসপাতাল থেকে নিয়ে রওয়ানা করা হয়।
প্রায় ৩টা ৩০মিনিট নাগাদ মন্দিরে নিয়ে আসা হয় , প্রভুর রথ থেকে নামিয়ে রাখা হয় নাটমন্টপে। সকলে এসে দেখেন— তিনি যেন প্রশান্তভাবে ঘুমিয়ে আছেন। কে বলবে—তাঁর দেহে জীবন নেই?
তাঁর শয্যাপার্শ্বে বসে আছেন শোকের প্রতিমূর্ত্তি পূজ্যপাদ বাবাই দা, পূ বিংকি দা,পূ সিপাই দা, পূ অবিন দা প্রভৃতি। ভক্তরা একখানি শয্যায় শায়িত অবস্হায় স্তব্ধভাবে অঝোরে চোখের জল ফেলছেন। আত্মীয় ও ভক্তবৃন্দ অশ্রুপ্লুত চোখে তাকিয়ে আছেন প্রাণপুরুষের মুখপানে। এই অমৃতমূর্ত্তি আরতো দু’চোখ দিয়ে দেখা যাবে না। তাই প্রাণের সবটুকু আকূতি নিয়ে শেষ দেখা দেখে নিচ্ছেন প্রতিপ্রত্যেকে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন সহস্র-সহস্র পুরুষ, নারী, যুবা, বৃদ্ধ, শিশু শোকাবেগে উদ্বেল হ’য়ে উঠছেন।সে মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক দৃশ্য সহনাতীত। এরই মধ্যে বাইরে চলছে নামকীর্ত্তন। অনেক ভক্ত এসে উপস্হিত হন! তখন আর-এক করুণ দৃশ্যের অবতারণা হয়।
সূর্যাস্তের পূর্ব্বেই শ্রীশ্রীদাদার নশ্বরদেহ বিশেষভাবে নির্ম্মিত একটি মঞ্চের উপরে চন্দনকাষ্ঠে রচিত চিতাশয্যায় শায়িত করার পরমপূজ্যপাদ বাবাই দা শাস্ত্রীয় বিধান-অনুযায়ী মুখাগ্নিকৃত্য সম্পন্ন করেন।
শেষকৃত্য সমাপ্ত হয় রাত্রি আটটার পর।তৎপর বিশেষভাবে আনীত গঙ্গাজলের দ্বারা চিতাভূমি প্রক্ষালিত করা হয়। পরমপূজনীয়া বড়বৌদি, পরমপূজ্যপাদ বাবাই দা, ও ঠাকুর-পরিবারের সবাই এবং সহস্র-সহস্র সৎসঙ্গী দেওঘরের পথে রওনা দেন। স্থানীয় জনসাধারণ শেষমুহূর্ত্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্হান করেন।
আজ আমরা নিঃস্ব,পৃথিবী নিঃস্ব, সবকিছু যেন থেমে গেছে এক লহমায়। অতি সহজেই বোধ করতে পারা যায় ১৯৬৯ এবং ১৯৯৪ সনের কথা, যখন আমরা আগেও দুইবার পিতৃহারা হয়েছিলাম, যদিও সেই মর্মান্তিক ব্যাথা কোনোদিনও অনুভব করতে পারিনি আগে। যাই হোক, "তিনি চোখের আড়াল হয়েছেন, মনের আড়াল নয়.."
তাইতো, শোকস্তব্ধ হৃদয়েও, বার-বার স্মরণ করি তাঁর (আচার্য্যদেব শ্রীশ্রীদাদা) কথা:
"ঠাকুরকে ছেড়ে থাকবেন না। সবাইকে কাছে টানার জন্য তিনি হাত বাড়িয়ে আছেন। হাতটা ধরেন। আপনার সামনেই আছেন। ধরেন, ঠাকুরের সাথে এক হয়ে যান। এটাই হচ্ছে মুক্তির পথ, প্রাপ্তির পথ, ঠাকুরত্ব জাগানোর পথ। সেই দিব্য অবর্ণনীয় জ্যোতির্ময় পুরুষ ----তিনি আপনার সামনে, আমার সামনে----সবাইকে ঘিরে আছেন---- সব সময় ----প্রতি মুহূর্তে। কাউকে ছাড়েননি।"
এই পুন্য-বাণী আমাদের মহাশোককে মহতী সাধনায় পর্য্যবসিত করুক।
Comments